Breaking News

সুখের সংসার | suker sansar gitobitan

#সুখের সংসার

কাহিনীঃ -প্রিয় চট্টোপাধ্যায় 

চিত্রঃ  সংগৃহীত

আমার নতুন বিয়ে হয়েছে, হুম আমাদের লাভ মেরেজ তবে আমাদের বাবা মা এতে কোনো বাধা না দিয়ে বরং আমাদের সাহায্য করেছেন,পুরো অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের মতোই ঘটা করে বিয়ে হয়েছে।
নতুন সংসার নতুন সবাই তবে নিজেকে মানিয়ে নিতে কোনো অসুবিধা হয়নি,আজ খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে সব কাজ একা করার চেষ্টা করছি,ছাদে জামা গুলো মিলছিলাম হঠাৎ
কেমন যেন একটা পোঁড়া পোঁড়া গন্ধ আসছে নাকে। ইশ গ্যাসে তরকারি হচ্ছিল আমারতো মনেই নেই।
জামা কাপড়গুলো মেলা বাদ দিয়েই ছুটলাম রান্নাঘরের দিকে। গিয়ে দেখি মা(শাশুড়ি) গ্যাসটা কমিয়ে দিচ্ছেন।

suker sansar gitobitan
suker sansar gitobitan


~ মা আসলে, আমি জামা কাপড় গুলো ধুয়ে মিলছিলাম,আমার একটুও মনে ছিলোনা।
- আচ্ছা বেশ কাপড় গুলো মেলে দিয়ে আসো খাবার টেবিলে।
~ কিন্তু মা তরকারিটাতো পুঁড়ে গেছে।
-সমস্যা নেই খুব বেশি পুঁড়ে যায়নি। অন্য সব খাবার এর সাথে বোঝা যাবেনা তেমন। আর তোমায় কে বলেছিলো আমার আগে উঠতে? কতদিন বলবো তুমি এখনো অনেক ছোটো সংসারটা বুঝে উঠতে আরো সময় লাগবে।এখনি এতো কাজ করতে বলিনি আমি হুম?
~মা তুমিতো রোজ ওঠো ভোরে, আমায় কিচ্ছু করতেই দাওনা। তাই আমি আজ ভোরে উঠে কাজ করব বলে এলার্ম দিয়ে রাখছিলাম। কিন্তু কে জানতো সবসময় এমন জটলা বাধিয়ে ফেলবো।
- ধুর পাগলি, আমি থাকতে তোমাকে এখনি এতো কাজ করতে হবেনাতো। পুরোটা জীবন পরে আছে তখন দেখবো আর কী কী জটলা বাঁধাও হাহাহা...!
তারপর ছাদে যেয়ে দেখি বাবা(শশুর) সব মিলে দিয়েছেন।
ও মা রান্না করায় ব্যস্ত থাকায় বাবাই শাড়ির কুচি ধরে দিয়েছেন।এতে লজ্জা পাওয়ার থেকে নিজেকে বেশি ভাগ্যবান মনে হয়েছিল।
সেই দিন সন্ধ্যায় ও ফোন করে বলল অফিসের কাজে আজ বাড়ি আসতে পারবে না।তাই সন্ধ্যায় নাস্তা করতে করতে মায়ের সাথে গল্প করছিলাম, কথা বলতে বলতে মজা করে বলছিলাম অনেক দিন আইসক্রিম খাইনি আগে বন্ধুদের সাথে কত আইসক্রিম খেতাম,ও এলে বলব আমাদের সবার জন্য আইসক্রিম আনতে। কিছুক্ষন পর একটা চকলেট আইসক্রিম সামনে এনে বলল এই নাও আইসক্রিম, আমি মুখ তুলে দেখি বাবা এনেছে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম, আমি তো মাকে গল্প বলছিলাম,বাবা কী করে জানলো।
তখন বাবা বলল ধর তাড়াতাড়ি তোর মায়ের জন্যেও এনেছি আর আমি বাইরে থেকে শুনেছি সব,তুই আমার মেয়ের মতোই তোর ইচ্ছে সখ আল্লাদ মানে আমাদের সখ আল্লাদ।

suker sansar gitobitan
suker sansar gitobitan

মাঝে মাঝে খুব অবাক হই, মানুষ কি করে এতোটা ভালো হতে পারে।এই নিয়ে এক সপ্তাহে দুইদিন তরকারি পুঁড়লাম। গত সপ্তাহেতো বাবার পছন্দের চিংড়ি মাছের মালাইকারিটায় লবনটাই বেশি দিয়ে ফেলছিলাম। সে কি লজ্জা আমার! তবুও বাবা তৃপ্তি সহকারে খেয়ে উঠলেন। আর মা? সে তো বরাবরই বলেন যে আমার হাতে নাকি জাদু আছে রান্না খেয়ে পেট একদম ভরে যায়। অথচ সেই একই রান্নাটা আমি খেতে কত অসস্তিবোধ করি। রান্নার 'র' ও জানতামনা, জয়েন্ট ফ্যামিলিতে বড় হয়েছি কখনো কোনো কাজ করতে হয়নি। তাই ঘর গোছানোর বাইরে বেশি কিছু জানতামনা। এ বাড়িতে যখন প্রথম পা রাখি সেদিনই আমার শাশুড়ি বলেছিলেন, "আমার একটা মেয়ে চাই, ছেলের বউ নয়"। সেদিনই বুঝেছিলাম আমার ভাগ্যটা ভীষন ভালো।
কতটা ভালো মনের মানুষ হলে কেউ ছেলের বউ কে হাতে কলমে শিখিয়ে নেয়, তা বাবা মা কে না দেখলে বুঝতামইনা।
পরের দিন
খাবার টেবিলে আমি খাবার গুলো সাঁজিয়ে রাখছিলাম। হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজাটা খুলতেই দেখি পাশের বাসার আন্টি এসেছেন। আমি ভিতরে আসতে বললাম। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন মা কোথায়? আমি রান্নাঘরে বললাম।
উনি মা এর সাথে গল্প করছিলেন। আমি টেবিলে বসে সব গোছাচ্ছিলাম। বাইরে থেকে স্পষ্ট সব শোনা যাচ্ছিলো। কথা শেষে বাড়ি চলে যাওয়ার সময় আন্টি মা কে বললেন,
-দিদি আর কতো খাটবেন? ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন কি করতে? বউ কে বসিয়ে রেখে রান্না করে খাওয়াইতে? এই করোনা দিনেও এতো এতো রান্না করছেন আপনি?দেখুন আমার কি সুন্দর কপাল, ছেলের বউকে দিয়ে সব রান্না করাই। আমার কিছু করতেই হয়না। এইতো এখনো দেখে আসলাম আমার ছেলের বউ রান্না করছে নানা রকমের তরকারি। সেই জন্যই বলছিলাম এতো ভালো হয়ো না দেখবেন ছেলের বউ মাথায় উঠে বসবে। পরে আর নামাতে পারবেন না।

কথাগুলো শুনে খুব খারাপ লাগছিলো আমার
কিন্তু খেয়াল করলাম মা একটা কথাও বলছেন না,অনবরত রান্না নাড়াচাড়া আওয়াজ করেই যাচ্ছেন।
সবটা চুপচাপ শোনার পর মা বললেন,
দিদি আজকে খাওয়া দাওয়াটা এখানেই করে যান, আমার বউমাটা অনেক ভালো পোলাও বানাতে পারে।একবার খেলে ভুলতেই পারবেন না। আর দিদি আমি বলি কি, সবসময় অপ্রয়োজনীয় কথা না বলে নিজের বউমা কেও একটু হাতে হাতে সাহায্য করেন দেখবেন খুব ভালো লাগবে আপনারও আপনার বউমাটারও।
মায়ের কথাগুলো শুনে ভেতরটা যেন শীতল হয়ে গেলো। অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম রান্নাঘরের দিকে।দেখলাম আন্টি চুপচাপ মাথা নিচু করে বের হয়ে গেলেন।
রান্নাঘরের দিকে গেলাম, গিয়ে মা কে জিজ্ঞেস করলাম, "আচ্ছা মা তুমি এতোটা ভালো কেন?" মা মিষ্টি হেসে জবাব দিলো তোমার জন্য।
ভুলে যেওনা আমিও তোমার মতো এই সংসারে এসেছিলাম।একটা প্লেট কি করে ধুয়ে ভাত বেড়ে খেতে হয় জানতামনা কখনো।কিন্তু আমার শাশুড়ি আমায় নিজের মেয়ের মতো করে শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছিলো।কখনো কোনো বকা দিয়ে কথা বলতোনা, একটা কাজ হাজারবার ভুল করতাম কিন্তু তিনি বুঝিয়ে উৎসাহ দিয়ে সেই কাজটা আবার করিয়ে দিতেন। সবটাই ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন, কখনো চোঁখ রাঙ্গিয়ে নয়।
মনে মনে ভগবানের কাছে ধন্যবাদ জানাই, আমায় এমন আরেকটা মা বাবা দেওয়ার জন্য।
আজকে আবার চিংড়ি মাছের তরকারিটা আমিই রান্না করেছি। মা পুরোটা সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাই বুঝি আজ পোঁড়া টোরা ছাড়াই কিছুটা পার্ফেক্ট তরকারি হয়েছে।




অপেক্ষা করছি বাবার কী বলে শোনার জন্য.....
বাবা আমার রান্না করা চিংড়ি মাছের মালাইকারি খেতে খেতে বললেন, বাহ্ এইনা হলে আমার মেয়ের হাতের রান্না। কাল কিন্তু খাসির মাংসটা আমার মেয়েই রান্না করবে। আমি অানমনে ভাবছি বাবা হয়তো আজকেও আমার মন রাখতেই এগুলা বলছে কিন্তু সেই ধারণাটা বদলে গেলো মূহুর্তেই। মুখের সামনে হাত দিয়ে ভাত তুলে ধরলো কেউ। তাকিয়ে দেখি মা। আমার চোঁখটা ঝাপসা হয়ে এলো, হা করতেই মা খাবারটা মুখে দিয়ে দিলেন। সত্যিতো আজ তরকারিটা খুব ভালো হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার টেবিলটা সবার হাসির শব্দে মুখোরিত হয়ে উঠলো। নিজেকে তখন মনে হচ্ছিলো যেন কঠিন পরীক্ষায় সদ্য পাস করা ছাত্রী।
মা কে বললাম মা, কাল যদি আবার খাসির মাংসটা পুঁড়িয়ে ফেলি তখন কি হবে?
মা কিঞ্চিত হাসির রেখা মুখে নিয়ে বললেন, "ধুর বোকা মেয়ে, আমি আছি তাহলে কি করতে?"

(কোনো মানুষই জন্ম থেকে শিখে আসেনা। তাকে হাতে ধরে শিখিয়ে পরিয়ে নিতে হয়। ছেলের বউ বলে যে তাকে শিখিয়ে বুঝিয়ে নেবেননা এটা চরম ভুল। সে যে সবটা বাবার বাড়ি থেকে জেনে আসবে এটা মনে করাও ভুল। কারন বাবার বাড়িতে একটা মেয়ে বড় হয় খুব আদর যত্নে তাই সে ততোটা কাজকর্ম শিখে উঠতে পারেনা। কারো ভুল হবার পরেও যদি সেই কাজটাতে উৎসাহ দেন, দেখবেন দ্বিতীয়বার আর সেই ভুলটা হবেনা। মনে রাখবেন আজ হোক বা কাল শশুর শাশুড়ি কিন্তু আপনিও হবেন।তাই সেটাই করুন যেটা আপনি আশা করেন আপনার ছেলের বউ এর কাছ থেকে।)

কাহিনীঃ -প্রিয় চট্টোপাধ্যায় 

চিত্রঃ  সংগৃহীত


➥ আপনার লেখা কবিতা, গল্প  ও আপনার এলাকার যে কোনো রকম খবর প্রকাশের জন্য whatsapp এ যোগাযোগ করুন 8769038178 নাম্বারে➥



কবিতা, আবৃত্তি, গান বা যে কোন সৃজনশীল পোস্ট নিয়মিত পেতে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ গল্পবিতান (galpobitan )


galpobitan facebook page


কোন মন্তব্য নেই