Breaking News

সতীপনা দেখে আর হেসে বাঁচিনা রেট কত। bangla story rate koto

রেট কত!

---------------------
লেখিকাঃ মানসী মন্ডল
চিত্রঃ সংগৃহীত

অনেকক্ষণ ধরে মোবাইলটা বেজেই চলল। মধু চোখ কচলে বোঝার চেষ্টা করল এখন ঠিক রাত্রি কটা বাজে। অন্ধকারে কিছু ঠাওর করতে না পেরে বালিশের পাশ থেকে হাতরে নিয়ে ফোনের স্ক্রীনে চোখ রাখল। দেখল আননোন নাম্বার।
এত রাতে কে ফোন করতে পারে! কেনই বা করবে? এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ফোনটা কেটে গেল। চেক করতে গিয়ে দেখল আগেও ওই নাম্বার থেকে বেশ কয়েকটা মিসকল হয়ে গেছে। মধু তখন হয়তো গভীর ঘুমে ছিল তাই শুনতে পাইনি। অনেক কিছু দুশ্চিন্তা মাথার মধ্যে এসে হাজির হলো, ঘুম ছুটে গেল। বাইরে যারা আছে এবং আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের বিপদাশঙ্কা করে তার বুক টা বড্ড কেঁপে উঠলো। কারণ তখন রাত প্রায় দুটো বাজে। এতরাতে ফোন মানেই দুঃসংবাদ। নাম্বারটা কে নিয়ে ডায়াল করবে কিনা ভাবতে ভাবতেই আবার ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করে ঘুম জড়ানো গলায় বলল----

bangla story rate koto
Bangla story Rate Koto

হ্যালো!
হ্যালো ম্যাডাম! কি খবর ঘুম কি ছাড়ছে না?
কে বলছেন ঠিক চিনতে পারলাম না তো! আর এত রাতে ফোনই বা কেন করেছেন?
থাক আর অত ন্যাকামো করে দরকার নেই। এখন যদি কাস্টমার না থাকে তাহলে ঠিকানাটা বলুন আমি আসছি।
কাস্টমার!! কি বলতে চাইছেন? আমি ঠিক বুঝলাম না তো!
সতীপনা দেখে আর হেসে বাঁচিনা।...হা হা হা
একটা গা জ্বালানো বিশ্রী শব্দের হাসি লোকটি হেসে উঠলো।
মধু কাঁপতে লাগলো। সে জলের বোতলটা হাত বাড়িয়ে খোঁজার চেষ্টা করলো। মনে হল গলাটা যেন শুকিয়ে এসেছে।
কি ই ইই !!? কিইইই বলতে চাইছেন বলুনতো আপনি ?কি যা তা বকছেন তখন থেকে! ভয়ে মধু তো তো করতে লাগলো।
আরে এত ধানাই-পানাই না করে " কত রেট " সেটা তো সরাসরি বলে দিলেই হয়। আমি কি বলেছি দাম কষাকষি করব?
রেট !দর কষাকষি? কি সব আজেবাজে বকছেন! আপনি কে বলুন তো?
আরে ম্যাডামের মনে হচ্ছে এখনো চোখে ঘুম ছাড়েনি এত ন্যাকামো না করে রেট আর ঠিকানাটা বলে দিলেই তো হয়। বাঁধা কাস্টমার হয়ে থাকবো ম্যাডাম......

কথাগুলো শেষ না হতেই মধু ফোনটা কেটে দিয়ে সুইচ অফ করে দিল।শেষের কথা গুলো সে আর নিতে পারছিল না। অজানা এক আশঙ্কায় তার বুক কাঁপতে থাকে। নানান কথা চিন্তা করতে করতে আবার শুয়ে পড়ে। জোর করে সারারাতে আর ঘুম আনতে পারেনি । এদিকে সকালে কলেজের টেস্ট। কি করে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। একবার ভাবল এখনই বাড়ির লোকজন ডেকে সমস্ত টা খুলে বলে। কিন্তু পরক্ষণেই সে চিন্তা করল তার ঘুমটা গেছে বাকিদের ঘুম আর কেড়ে কাজ নেই। যা বলার কাল কলেজ থেকে ফিরে এসে বলবে।
মধুমিতা রায় ওরফে মধু। বন্ধু-বান্ধবীরা তাকে মধু নামে ডাকে। আর এই নামের সাথেই সে পরিচিত এবং কম্ফোর্টেবল। সেদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে মোটামুটি একটা ফাঁকা বাসে তারা বন্ধুরা মিলে সিট নিয়ে বসে গেল। অরুণ, মিতা, টুম্পা, সপ্তর্ষি সবাই ছিল। হঠাৎ করেই একটা জায়গায় বাসের ভিতরে কিছু বখাটে, স্কুল ছুট ছেলে উঠে এল। শিস দিতে দিতে এবং কিছু লারেলাপ্পা হিন্দি গান গাইতে গাইতে তারা মধুকে নানারকম ইশারায় উত্ত্যক্ত করতে লাগলো।মধু ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে সিটের একটা কোনায় চেপে গেল। ওই এসবের সাথে একদম অভ্যস্ত নয়। আর মধুর এই সিটিয়ে যাওয়া দেখে ছেলেগুলো যেন দ্বিগুন উৎসাহিত হল। তাদের মধ্যে ছিল একটা ডন টাইপের ছেলে। চুলগুলোর ঝাকরা ঝাকরা, কালার করা। হাতে বালা পড়া। গুটকা পান খেয়ে দাঁতগুলোর রং কালো। আচমকা মধুর কাছে মুখ এনে বলল---ওহ সুন্দরী। কী নাম তোমার?


মধু মুখে কিছু না বলে নাকে হাত চাপা দিল।
ওপাশ থেকে সপ্তর্ষি চেঁচিয়ে উঠলো ----
এই কে রে তুই? মেয়েদের সাথে অসভ্যতামি করতে লজ্জা করে না!
ওর কথা কানে না নিয়ে ছেলেটি আচমকা মধুর ওড়না ধরে টান মারলো। মধু কোনভাবেই এটার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাই সে রাগে দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে, সপাটে ছেলেটির গালে একটি চড় কষিয়ে দিলো। ছেলেটিও মধুকে নরম সরম ভেবেছিল। এমনটা সেও প্রত্যাশা করেনি। রাগতো চোখে গালে হাত বুলাতে বুলাতে শুধু বলল----
"দেখে নেব তোকে!"
আর এই একটা কথাতেই মধু যেন কেমন ভয়ে আঁতকে ওঠে।সেও বুঝতে পারেনি এতটা জরালো প্রতিবাদ সে করবে। তার বন্ধুরা পাল্টা জবাব দিতে গেলে, কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি ধস্তাধস্তি পর্যন্ত হয়ে যায়। দুই তরফেই দুই তারফ কে বলে দেখে নেব।


এরপরে বেশ কিছুদিন চলে গেছে মধু যথাসময়েই কলেজে যায় এবং ফিরেও আসে। তবে সেই ছেলেগুলোকে আর কখনও বাসে বা অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যায় নি। এই নিয়ে তারা বন্ধু-বান্ধব মিলে বেশ হাসাহাসি ও করলো। এটা ভেবে তারা আনন্দ পেল যে ওরা ভয় পেয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে।
মধু হচ্ছে উঠতি সুন্দরীদের মধ্যে অন্যতম। তার সৌন্দর্যে এমন একটা স্নিগ্ধতা আছে যা সবাইকে আকর্ষণ করে। গায়ের রং যে খুব ফর্সা তা নয়,কিন্তু শ্যামলা মেয়েটির নাক চোখ মুখ খুব স্পষ্ট। তাই সেই অর্থে সে সুন্দরী। বিদ্যে বুদ্ধিও তার আহামরিও নয়, ছি ছি ও নয়, চলনসই। বাড়িতে তারা ভাই বোন, দাদু ঠাম্মা, মা বাবা। বাবার কাপড়ের দোকানের ব্যবসা। মোটামুটি সচ্ছল পরিবার। মধুর কোনও কিছুর অভাব তার বাবা রাখে নি। মেয়ে কলেজে যেতে না যেতেই তার সৌখিনতা মেটাতে বাবা হাতে তুলে দেন একটি এন্ড্রয়েড দামী মোবাইল।এতে নাকি মেয়ের বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে নোট নিতে সুবিধা হয়। তাছাড়া গল্পগুজব তো আছেই। বাবার আদর, দাদু ঠাম্মার আদর, মায়ের শাসন, ভাইয়ের সাথে খুনসুটি এই নিয়েই মধুর দৈনন্দিন জীবন।

বেশ কিছুদিন হয়ে গেল মধু লক্ষ্য করলো তার ফোনে আন নন নম্বর থেকে যখন তখন ফোন আসছে। আর রাত হলেই এটা যেন অত্যাচারের মাত্রা নিচ্ছে। আর সেই উল্টো পাল্টা নোংরা কথা। প্রত্যেকজনের আওয়াজ কিন্তু আলাদা। ফোন রিসিভ করলেই "রেট কত"। আজকাল সে ফোন ধরতে বড্ড ভয় পাই। অথচ মুখ ফুটে বাড়িতে কিছু বলতেও পারেনা। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করব ভেবেও সেটা তার করা হয়ে ওঠে না। কোথাও যেন একটা বাধে। আস্তে আস্তে হাসিখুশি মেয়েটা ঝিমিয়ে পড়ে। বন্ধুরা তার এই পরিবর্তনটা লক্ষ্য করে। তার কাছে বারবার জানতে চেয়োও কোনো সুরাহা হয়নি। একটা সময় দেখা গেল মধুকে সেভাবে আর কলেজেও পাওয়া যাচ্ছে না। একদিন ওর বন্ধুরা ঠিক করল ওর বাড়ি যাবে। কেন ও কলেজ আসছে না সেটা যেমন করেই হোক জানতে হবে।
আগে বন্ধুবান্ধবরা বাড়ি এলে মধু কত খুশি হত। কিন্তু আজ তাকে বড্ড মনমরা লাগলো।
কি হয়েছে রে মধু? কলেজ যাসনি কেন? টুম্পা বেশ শাসনের সুরে জিজ্ঞেস করল।
মধু কোন উত্তর করল না চুপ করে জানালার বাইরের চেয়ে থাকল।
অরুণ বলল ..."আমরা আসাতে কি তুই খুশি হোসনি মধু! খুব ক্ষীণ কণ্ঠে মধু জবাব দিল---
না না সেরকম কিছু না। তবে আমাকে জানিয়ে আসতে পারতিস।
সপ্তর্ষি রেগে গিয়ে বলল ---জানিয়ে আসব মানে!এখন তোর বাড়িতে আসতে গেলে ,তোর সাথে কথা বলতে গেলে, আমাদের আগে থেকে অ্যাপয়নমেন্ট নিতে হবে নাকি?
মধু বেশ বিরক্তির সুরে বলল -----
কি বলতে এসেছিস সেটা বল না,এত কথা না বাড়িয়ে!
সবাই অবাক হয়ে এ ওর মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো।ওরা বুঝতে পারছেনা মধুর মত একটি জলি মেয়ে কেন এরকম ভাবে তাদের সাথে কথা বলছে!
এমন সময় মধুর মা ওদের জন্য চা মিষ্টি নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
আন্টি মধুর কী হয়েছে? ওতো আমাদের সহ্যই করতে পারছে না!
খুব বিষন্নতার সাথে টুম্পা বলল।
দেখো না বাবা, মধু কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। কিছুতেই কলেজে যাচ্ছে না। সময়মতো খাচ্ছে না ঘুমাচ্ছে না। কি হয়েছে তাও বলছে না! আমার বড্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে ওকে নিয়ে। তোমরা এসেছ ভালোই হয়েছে, দেখো বুঝিয়ে-সুজিয়ে যদি কিছু বের করতে পারো।
বলতে বলতে মধুর মা'র চোখ জলে ভরে উঠলো।
টুম্পা তাড়াতাড়ি তার কাঁধে হাত রেখে বলল আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না আন্টি। আমি এক্ষুনি মধুর মুড ঠিক করে দেব।
আচমকা মধু চিৎকার করে উঠল। তোরা যাবি এখান থেকে? আমাকে একটু একা থাকতে দে প্লিজ। আমি তোদের পায়ে ধরছি।
এরকম ব্যবহারে সবাই কেমন হকচকিয়ে গেল। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সবাই নত মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। মধুর মা ওদের দিকে করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। কিন্তু ওদের কিছু করার নেই। কেননা ওদের উপস্থিতি মধু কিছুতেই মেনে নিচ্ছে না।


মেয়ের দিন দিন এরকম ঝিমিয়ে থাকা মা সহ্য করতে পারছিল না। তবুও হাল ছেড়ে দিয়ে মেয়েকে মেয়ের মত থাকতে দিল। এখন রাতে মধুর মা মধুর সাথে শোয়। মধুর মা লক্ষ্য করছে বেশ কয়েকদিন ধরে রাতে বারবার ফোন আসে আর ফোনটা নিয়ে মধু বাথরুমে চলে যায়। তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বিছানায় কাত মেরে শুয়ে পড়ে। দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না সে ঘুমিয়ে আছে না জেগে। ঠিক যেন একটি শবদেহ কাট হয়ে গেছে। বেশ কয়েকদিন এটা লক্ষ্য করার পর মা চেপে ধরল।
কি হয়েছে বল? এত রাতে কে ফোন করে?
মধু যখন কিছুতেই মুখ খুলতে চাইছিল না মা সপাটে তার গালে একটা চড় কষিয়ে দিল।
তোর জন্য অজানা আশঙ্কায় চিন্তা করে মরব আর তুই এমন চুপ মেরে থাকবি?তোর বাবা জানলে আস্ত রাখবে ভেবেছিস?তিনি নানান কাজে ব্যস্ত থাকেন সারাদিন এসব চিন্তা তাকে দিতেও চায় না। কিন্তু তুই কী চাইছিস....
বহুদিন পর মধু কান্নায় তার মায়ের কোলে ঢোলে পরলো। মা স্নেহের সাথে তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল---
কি হয়েছে মধু? আমাকে বল! আমি তো তোর মা, সবচেয়ে ভাল বন্ধু ।আমাকে বলাতে লজ্জা কিসের?
মা.....!
হ্যাঁ বল! কি হয়েছে বল? মা উতলা হয়ে ওঠে।


bangla story rate koto
Bangla Story Rate koto

মা ওরা আমায় ফোন করে নোংরা নোংরা কথা বলে। আমার "রেট কত" জিজ্ঞেস করে। আমার ঠিকানা জানতে চায় ।ওরা কখন আসবে টাইম জানতে চায়।
ওরা মানে! কারা?
মায়ের যেন বিস্ময়ের অন্ত থাকে না। মধু একনাগাড়ে কেঁদেই চলে ।
আমি জানিনা মা! ওরা সব কারা? ওটা আমার নম্বরইবা কোত্থেকে পেল! কেনইবা আমাকে.......
মধু আর বলতে পারেনা বুকফাটা কান্না তার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে। এ যেন চিরকালীন নারীর অবমাননা অসহায়তার কান্না।
মা সবটা বুঝতে পেরে মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে বলে----
তুই কিছু ভাবিস না মধু। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আছি তো ।একটু ধৈর্য ধর।


পরদিন সকালে মধুর মা মধু কে না জানিয়ে তার বন্ধু বান্ধব কে ফোন করে। মোটামুটি ঘটনাটা তাদেরকে বলে। কিন্তু কার্যকারণ সূত্র টা ঠিক বলতে পারে না কারণ ওটা ওনার অজানা। ওর বন্ধুরাও কিছু বলতে পারে না এই বিষয়ে। ওদের মনেও দ্বিধা, খটকার শেষ নেই। তবুও বলে--- আন্টি মধুকে একটু নজরে রাখবেন আমরা দেখছি কি করা যায়।খোঁজ খবর নিয়ে আপনাকে জানাব।
মাসখানেক হয়ে গেল মধু আর কলেজে যায় না। হাসেও না, কথাও বলেনা। মধুর মা মধুর বাবাকে সবটা জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বাবাকে কিছু বলে না কারণ সারাদিন বাইরে থাকে মানুষটা এই ভেবে। সেদিন সন্ধ্যাবেলা বাবা ফিরতেই মধু বসার ঘর থেকে বেড রুমে চলে যায়। অনেক ডেকেও মধুকে কাছে এনে বসাতে পারেনা বাবা। কেমন যেন ঘোরের মধ্যে হেঁটে রুমে চলে যায়। বাবা বেশ কিছুটা অবাকও হয়।সকাল থেকে মধুর মা'র আজ কাজের খুব চাপ ছিল। মেয়ের দিকে সে ভাবে নজর দেওয়ায় হয়নি। চা জলখাবার নিয়ে মধুর মা গিয়ে তার বাবার পাশে বসে।
মধুর ব্যাপারে তোমাকে কিছু বলার ছিল।


হ্যাঁ বল। মেয়েটা দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। কী হয়েছে বলতো ওর?
মুখের কথা শেষ না করতেই মধুর ঘর থেকে একটা বিকট আওয়াজ ভেসে আসে।
মধুর বাবার আধ খাওয়া চায়ের কাপটা হাত থেকে পড়ে যায়। মধুর মা সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় মেয়ের ঘরের দিকে। পিছনে পিছনে বাবা, দাদু, ঠাম্মা। রুমের সামনে গিয়ে দেখে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ। এতো ডেকেও তার সাড়া পাওয়া যায় না। মধুর মা খুব উতলা হয়ে যায়। তার বাবাকে বলে ---
এক্ষুনি তাড়াতাড়ি দরজা ভাঙ্গ।
বাবা সমগ্র ঘটনাটা বোঝার জন্য একটু অপেক্ষা করে।
কি দেখছো? তাড়াতাড়ি যাও। কিছু একটা ব্যবস্থা করো।
দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে মধুর মা সিলিং এর দিকে তাকায়। দেখামাত্রই মেঝেতে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে।
মধুর বাবা এতসব কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না। সে ছুটে গিয়ে একরকম মধুর মায়ের উপর পারা দিয়ে মধুর দেহটাকে উপরে তুলে ধরে। লোকজন ডেকে যে মধুর গলার দড়িটা কেটে নামাবে সে পরিস্থিতিও নেই। বৃদ্ধ দাদু ঠাকুমা শুধু বিহ্বলের মত তাকিয়ে থাকে। ওদিকে মধু ছটফট করতে থাকে। মধুর ভাই কোত্থেকে ছুটে এসে দড়ি কেটে দেয়।

bangla story rate koto
ICU

বেশ কিছুদিন হয়ে গেল মধু হসপিটালের আইসিইউতে। কোনও কথা বলে না। শুধু চেয়ে থাকে আর চোখে জল পড়ে। ডাক্তার বলেছে ও আর কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না। শরীরের 90% প্যারালাইজড। মধুর এমন করুণ দৃশ্য দেখে বন্ধুবান্ধবরাও বাকরুদ্ধ। মধুর মা দু'বেলা করে হসপিটাল আসে। মেয়ের পাশে বসে, আর গায়ে মাথায় হাত বুলায়। অসহায় মায়ের এর বেশি আর কিছুই করার নেই। মধুর বাবা তো সেই সেদিন থেকেই চুপ মেরে গেছে।
মধু ভাঙ্গা গলায় খুব মৃদুস্বরে ডেকে বলে---


" মা'"
মধুর মা চমকে উঠে। হ্যাঁ মধুই তো ডাকছে। তার ঠোঁট দুটো কাঁপছে। কিছু বলতে চাইছে।
কি হয়েছে বল ?কেন এমন করলি মা? তোর কি কিছু সমস্যা হচ্ছে? ডাক্তার ডাকবো?
বহুদিন পর মধুর কন্ঠে মা ডাক শুনে মা উতলা হয়ে যান। অনেক প্রার্থনা করে আজ প্রথম মধুর গলার স্বর ফিরে এলো। মা তাই কি করবে খুঁজে পাচ্ছিল না।
মধু মাথা নেড়ে বারণ করে।
মা ওরা আমার নম্বরটা বাসের, ট্রেনের, প্লাটফর্মের, বিভিন্ন দোকানের দেওয়ালে লিখে দেয়, তার সাথে লিখে দেয় "যখন চাইবেন পেয়ে যাবেন, মনের মত রেট পেলে। আই অ্যাম এ কলগার্ল।"
কারা করেছে এমন কাজ! আমাকে বল কারা করেছে?
একদল বখাটে ছেলে যাদের ঔদ্ধত্যে আমি শিক্ষা দিতে গেছিলাম, প্রতিবাদ করেছিলাম।ওরাই আমাকে কয়েকদিন আগে ফোন করে বলে... "কী রে দেখে নেব বলেছিলাম তো, দেখ এবার কেমন লাগে।"


লেখিকাঃ মানসী মন্ডল
চিত্রঃ সংগৃহীত

কোন মন্তব্য নেই