Breaking News

বাঁচার ইচ্ছে

গল্প : বাঁচার ইচ্ছে

কাহিনী : প্রিয়

জানালা দিয়ে সূর্যের রশ্মি চোখে পড়তেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল,শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে,মনে হয় জ্বর হয়েছে আর গলাটাও যেন ধরে গেছে,কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে খুব।
মনের মধ্যে তিব্র একটা ভয়ের সৃষ্টি হলো,
কি করবো কিছু মাথায় আসছে না।তারপর ফোন থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত হেল্প লাইনে  ১৮০০-৩১৩-৪৪৪-২২২ নাম্বারটাতে কল করে জানতে পারলাম একই রকম লক্ষন করোনা রোগীদের দেখা যায়।আমি কলকাতায়  থাকি মা বাবা বোন গ্রামে থাকে, তাই আমি রুম থেকে না বেরিয়ে বাবাকে কল করে সবটা জানালাম,বাবাও হতভম্ব হয়ে গেল,তারপর এম্বুলেন্স পরিষেবায় কল করলাম কিন্তু ওরা বলল এখন একটাও এম্বুলেন্স ফ্রি নেই আর আশে পাশে কিছু জনের নাম্বারে কল করলেও কোনো গাড়ি আমাকে নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছে না।কী করবো না করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।হয়তো বিনা চিকিৎসায় প্রান হারাতে হবে আমায়।বাবা আবার কল করলো মা তো কান্না শুরু করে দিয়েছে,শেষ পর্যন্ত ৩ ঘন্টা পরে হেল্পলাইন থেকে রেসপন্স এলো, কিছুক্ষন পর এম্বুলেন্সে করে  কিছু জন এসে আমাকে পিপি কিট পরিয়ে নিয়ে গেল,মনে মনে ভাবলাম হয়তো বাবা মায়ের সাথে শেষ দেখাটাও হবে না।
যখন জানতে পারলাম, সত্যিই আমিও করোনা নামক বিষাক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত। দুজন নার্স আর একজন ডাক্তার আমাকে পুনরায় চেকাপ করিয়ে নির্দিষ্ট একটা রুমে নিয়ে আসে।  এখানে আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে উনারা চলে যায়। আমি বেডে শুয়ে আছি। আমার বেডের চারপাশে পলিথিনের মতো কি যেনো দিয়ে আবৃত। হাতের মধ্যেমা আঙ্গুলে কি যেনো দেওয়া। মাথার ডান পাশে অক্সিজেন মাস্ক। বেড থেকে উঠে বসলাম, কেনো যেনো একাকিত্ব গ্রাস করেছে। সামনের পর্দা সরাতেই দেখলাম, কাচের দেওয়াল। অবাক হলাম না, জানতাম এমনি হবে। দেওয়ালের ওপাশে কেউ নেই, মাঝে মধ্যে দু-একজন নার্স যাতায়াত করছে। রুমের পশ্চিম দিকে একটা দেওয়ালে ছোট্ট জানালা থেকে দেখা যাচ্ছে সূর্য ডুবছে,মনে মনে ভাবলাম আমিও বেলা শেষে ডুবে যাওয়া সূর্য্যের মতো। জানিনা কখন আমার জীবনের আলোটা আমাকে না জানিয়েই হঠাৎ করেই নিভে যাবে। নিরব মনে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকি।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ঘোর কাটে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি সম্পূর্ণ প্রটেক্ট নিয়ে একজন নার্স আমার দিকে এগিয়ে আসছে। হাতে ঔষধের থালা, অপর পার্শে খাবার, আর আমার পছন্দের কিছু ফল। ফলগুলো মনে হয় বাবা পাঠিয়েছে।  নার্সটা কিছুটা দূর থেকে বলে খাবারের পর মেডিসিন গুলো খেয়ে নাও। এটুকু বলে নার্সটা চলে যায়। এখন আর খেতে ইচ্ছা করছেনা। চোখের পাতাটা ভারি হয়ে গিয়েছে।  দেওয়ালে রাখা ঘড়িটার দিকে তাকালাম দেখি রাত ১২টা বাজে। আশে পাশের সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, আমি চোখ ঘুরিয়ে উত্তর পার্শ্বে চোখ পড়তেই দেখলাম, তিন-চার বছরের একটা বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে নাকে অক্সিজেন মাস্ক। কি সুন্দর গুছিয়েই না ঘুমাচ্ছে , অজানা কারনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমি চোখ বুজে ঘুমের আশায় প্রহর গুনছি ঘুমেরা আমার কাছে ধরা দিচ্ছেনা।

bacher iccha

Bacher Iccha

-: তোমাকে একটা কথা বলার ছিল(মৌ)
-: হুম বলো? (আমি)
-: কিছু না বলেই মৌ কাঁদতে লাগলো,
-: আরে কাঁদছ কেন?কী হয়েছে বলো?
   আমার শাশুড়ি বকেছে বুঝি আমার বউটা কে?
-: আমাকে জাপটে ধরে আরো জোরে জোরে কাঁদতে
   লাগলো।
-: মৌয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে আবার জিজ্ঞেস 
    করলাম,"বলো কি হয়েছে?"
-: জানো আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে
  দিয়েছে!
-: কথাটা শুনে আমিও যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
    কী বলবো খুঁজে পাচ্ছি না।
-: মৌ বলল,"চলো আমরা পালিয়ে যাই।"
-: নাহ্ এটা কী করে সম্ভব?
  এখন করোনা চারিদিকে তোমায় নিয়ে কোথায়
  যাবো,তা বাদে আমি কোনো চাকরি করি না।
   খাওয়াবো কী তোমায়?
-: মৌ রাগান্বিত চোখে আমায় বললো,
   "ভালোবাসো না আমায়?"
-: বাসিতো।
-: তাহলে আমাকে নিয়ে পালিয়ে চলো।
-: "না" ছাড়া আমি কিছু বলতে পারলাম না।
-: মৌ আমার হাত ছেড়ে শেষ বারের আমার দিকে
 দেখে চলে যেতে লাগল,যেতে যেতে অদৃশ্য হয়ে
  গেল।
হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে গেল, চোখ চেয়ে দেখি আমি বেডে,আমার সামনে নার্স দাঁড়িয়ে কী যেন লিখছে।
হঠাৎ করেই অনুভব হচ্ছে আমি শ্বাস নিতে পারছি না, কষ্ট হচ্ছে খুব।নার্সটা তাড়াতাড়ি এসে অক্সিজেন মাস্কটা আমাকে পরিয়ে দিল।আর হাতে একটা ইনজেকশন দিতেই আমি আবার ঘুমে ঢলে পড়লাম।
,,
শেষবারের চেকাপে জানতে পারলাম। করোনার পাশাপাশি আমার শরীরে দেখা দিয়েছে লিভার ক্যান্সার। শুনে একটুও কষ্ট হয়নি কারন আমার বাঁচার ইচ্ছে ছিল না।আর ঐ যে স্বপ্নটা দেখেছিলাম ওটা সত্যিই আমার সাথে ঘটেছে কিছু দিন আগে।ওই ঘটনার পর থেকে প্রতিরাতেই আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
,,
কিছুক্ষন পর নার্স জানালো আমার বাবা, মা বোনন দেখা করতে এসেছে। কাঁচের দেওয়ালের ওপাশে বাবা মা বোন দাঁড়িয়ে আমরা কতইনা কাছে তবুও কতদূরে, মাঝখানে কাঁচের দেওয়াল। সবাই কাঁদছে অঝরে কাঁদছে। আমি ওদের দিকে দেখে একটু কাঁদতেও পারছি না হয়তো মানুষ বেশি কষ্ট পেলে কাঁদতে ভুলে যায়।
বিকেল ৩ টা বাজে একা শুয়ে আছি,
,,কতদিন হয়ে গেলো ফোন হাতে নেয়না।  কষ্ট করে আজ ফোন হাতে নিলাম। লক খুলতেই দেখি অনেক গুলো কল, অনেক গুলো মেসেজ।  ফোন ব্যাক করতে চাইলেও আর ব্যাক করা হয়ে উঠেনা কথা বলতে পারিনা যে। চাইলেই আর বন্ধু-বান্ধবের শান্তনামূলক মেসেজের রিপ্লাই করতে পারিনা, শরীর যে আর সায় দেয়না।
অনেক কষ্টে মেসেজ টাইপ করলাম আমার বোনকে।
" লক্ষিটা আমাকে মাফ করে
দিস। তোদের খারাপ সময়টাতে
আমি পাশে থাকতে পারবোনা রে।
তোর করা দুষ্টুমি গুলো ভিষন
মিস করছি রে। জানি আমি মারা
গেলে হয়তো আমাকে দাহ্ও
করা হবেনা। জানিস এ বিষয়ে
আমার কোনো কষ্ট নেই।তবে জানিস
আমাকে নিয়ে বাবা মায়ের
অনেক সপ্ন ছিলো। একমাত্র
আদরের ছেলে ছিলাম তো।
আমি আর তুই ছাড়া আমাদের বাবা মাকে
দেখার মতো কেউ নেই রে,
তোর তো বিয়ে হয়ে যাবে। প্লিজ
লক্ষি বোনটি আমাদের বাবা মাকে
দেখে রাখিস,তুইও ভালো থাকিস"

আরও পড়ুন :- কত রেট


মেসেজ করেই ফোনে বাবা মায়ের ছবিটাকে দেখে কাঁদছি,হঠাৎ করেই একটা কল এল নামটা দেখে অবাক হওয়ারই কথা,মৌ আমাকে কল করেছে!ধরতে ইচ্ছে না হলেও শেষ বেলায় একটু ভয়েস শোনার ইচ্ছে হল,
~ হেলো,(আমি)
- জানো তো আমার বিয়েটা ভেঙে গেছে।(মৌ)
~ আমি শুনেও আবার শুনতে চাইলাম।
- হ্যাঁ ঠিকি শুনেছো, তুমি কোথায় আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই!
~ অনেক দেরি করে ফেলেছো গো,আমি হাসপাতালে।
- মানে টা কী? তোমার কী হয়েছে?
~ আমার করোনা হয়েছে সাথে লিভার ক্যান্সার।
- কাঁদো গলায় কী বলছো এসব?
~ হ্যাঁ ঠিকি বলছি।
- চিন্তা করো না তুমি খুব তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে।
আমাদের স্বপ্নগুলো পূরন করতে হবে তো।
~ চুপ করে রইলাম। (খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ওর সামনে কাঁদতে পারছি না।)
- খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে?
~ হুম দেখা করবো তো, আমি ঠিক হয়ে যাবো।
- আর কিছু না বলে ফোনটা সুইচ অফ করে দিলাম।
জীবনের অন্তিম মুহুর্ত্য এসে বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা তীব্র থেকে অতি তীব্র হচ্ছে। যদি আর একটুখানি বাঁচতে পারতাম।
,,
অনেক কিছু বলার ছিলো। অনেক কিছু করার ছিল।
চোখটা ঝাপসা হয়ে উঠেছে। আজ মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। নিঃশ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। চোখ খুলতে পারছিনা। কানে মাঝে মাঝে আওয়াজ ভেসে আসছে ডিজিটাল যন্ত্রের টিট টিট। একটু পর কেনো জানি কান তালা লেগে গেলো। আর কোনো আওয়াজ কানে আসছেনা। অনেক চেষ্টা করতেছি চোখ খোলার, হাত নাড়ানোর পারছিনা প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। চোখের সামনে বাবা, মা,বোন আর আমার মৌয়ের ছবি ভেসে উঠছে।  চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে আর একটু খানি বাঁচতে চাই। শরীরটা ধীরে ধীরে ঝিম মেরে আসছে। ডিজিটাল যন্ত্রটা বিপ শব্দে থেমে গেলো।
,,
সমাপ্ত
,,
বি দ্র : করোনা হলেই মারা যায় এমন নয় বেশির ভাগ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠে। নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন সাবধানে থাকুন,সতর্ক থাকুন। ভগবান সবার ভালো করবে।।
প্রথম বার করোনা নিয়ে কোনো গল্প, ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। কমেন্টে জানিও কেমন লাগলো।সবার সুস্থতা কামনা করি।

চিত্র- সংগৃহীত

কোন মন্তব্য নেই