বিধবার প্রেম নাকি পাপ/ Widow Love
বিধবার প্রেম নাকি পাপ?
এ গল্পটা অনুরাধার।
বয়স তখন মাত্র ২৬। গায়ের রং ফর্সা, চেহারায় ক্লান্তির ছাপ, বুকভরা দুঃখ।
স্বামী সুদীপ এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল। রক্তে ভেজা রাস্তা আর নিস্তব্ধ সংসার—এই ছিল তার প্রাপ্তি।
দুই খুদে সন্তান, ভাঙা কুঁড়েঘর আর খালি হাঁড়ি… জীবনটা হঠাৎ যেন আঁধারে ডুবে গেল।
আত্মীয়স্বজনের দরজায় হাত পাতল, কেউ বলল—“আমরাই তো সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।”
গ্রামের মানুষ সান্ত্বনা দিল বটে, কিন্তু কারও হাতে রুটি এল না।
বাঁচার জন্য অনুরাধা স্কুলে ঝাড়ুদারের কাজ নিল।
সেখানেই তার সঙ্গে আলাপ হল অর্কর। বয়স ২৭, লম্বা চেহারা, চোখে অদ্ভুত এক দীপ্তি, তবে সে তখন বেকার।
অর্কর স্বভাব ছিল অন্যরকম—না বাড়াবাড়ি, না মিথ্যে প্রতিশ্রুতি।
সে অনুরাধার প্রতিটি কথা মন দিয়ে শুনত, ভারী থলেটা কাঁধে তুলে দিত, আর তার নীরবতাকেও বুঝে নিত।
আস্তে আস্তে অনুরাধা বুঝল, অর্কর সঙ্গেই সে এক অচেনা শান্তি খুঁজে পাচ্ছে।
গ্রামের পথঘাট, কখনো নদীর ধারে, কখনো আমবাগানে—চুপিসারে দেখা হতে লাগল।
হৃদয়ের সাথে শরীরের ব্যবধান ভাঙতে শুরু করল।
এক বর্ষার রাতে, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ঘরে একা ছিল অনুরাধা।
ছেলেমেয়েরা মামাবাড়ি গিয়েছে।
হঠাৎ দরজায় কড়া—অর্ক দাঁড়িয়ে ভিজে একেবারে কাঁপছে।
কোনো কথা নয়, অনুরাধা তার হাত শক্ত করে ধরল।
সেই রাতটা শুধু দেহের মিলন ছিল না—দু’টি ভাঙাচোরা হৃদয়ের একে অপরের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার গল্প ছিল।
কিন্তু গ্রাম… গ্রামের দেয়ালেরও কান আছে।
কারও চোখে পড়ে গেল তাদের, আর পরদিন সকালেই শুরু হল ফিসফিসানি—
“বিধবা হয়েও আবার যুবকের সঙ্গে ঘোরাঘুরি!”
“লজ্জা নেই, সন্তানদের কী শিক্ষা দেবে?”
গালিগালাজ, ইট-পাথর পড়ল অনুরাধার ঘরে।
শেষে ডাক পড়ল পঞ্চায়েতের।
যারা সুদীপ মারা গেলে এক ফোঁটা সাহায্য করেনি, তারাই এবার বিচারক সেজে বসল।
প্রধান গলা চড়িয়ে বলল—
“একটা বিধবা আর এক অবিবাহিত ছেলের সম্পর্ক—এ সমাজ মানবে না।”
সেদিন প্রথমবার অনুরাধা সোজা তাকাল সবার চোখে।
বলল—
“যখন আমার সন্তানরা না খেয়ে কেঁদেছিল, তখন সমাজ কোথায় ছিল?
আমার চোখের জল মুছতে কেউ এগোয়নি।
আজ আমি আবার হাসতে শিখছি, সেটাই কেন কাঁটার মতো বিঁধছে?”
নিশ্চুপ হয়ে গেল সভা।
অর্ক এগিয়ে এল—
“আমি অনুরাধাকে শুধু শরীরের জন্য চাইনি, তার মন, তার যন্ত্রণা, তার ভালোবাসা সবটাই আমার কাছে।
যদি এটা অপরাধ হয়, তবে আমি এই অপরাধ বারবার করব।”
গ্রাম তখন ভাগ হয়ে গেল দুই দিকে—
একদল শুধু নারীদেহ দেখল,
আরেকদল তার মানসিক যন্ত্রণা বুঝতে পারল।
কিছুদিন পর…
অনুরাধা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে এল।
একটি স্কুলে কাজ পেল, অর্কও তার পাশে দাঁড়াল।
সন্তানদেরও পেল বাবার নাম।
আজ কেউ জিজ্ঞেস করলে—
“তুমি কি বিধবা?”
সে মৃদু হেসে উত্তর দেয়—
“না… আমি সেই নারী, যে আবার নিজের সম্মান আর ভালোবাসা ফিরে পেয়েছে।”
এবার প্রশ্ন তোমাদের কাছে—
👉 অনুরাধা আর অর্ক কি ভুল করেছে?
👉 একজন বিধবার কি আবার সুখী হওয়ার অধিকার নেই?
👉 তোমরা কীভাবে দেখছ অনুরাধাকে?
তোমাদের উত্তর দাও, কারণ এ প্রশ্ন শুধু অনুরাধার নয়, আমাদের সমাজেরও।
✍️ লেখা সংগৃহীত
কোন মন্তব্য নেই