কেন পলাশীর প্রান্তরে সেদিন ক্লাইভের হাতে সিরাজদৌল্লার পরাজয় হয়েছিল ? প্রকৃত সত্যটা কি ?"
শনিবারের পাঁশকুড়ো লোকাল। কামরা ভর্তি অফিস ফেরত যাত্রী।
ভরা কামরায় লম্বা কিডস ব্যাগ নিয়ে একজন উঠল। কামরাশুদ্ধু সবাই অসন্তুষ্ট। এই ভিড়ে এই গরমে অাবার হকারের চিৎকার শুরু হবে। যাই হোক, ভদ্রলোক শুরু করলেন " না, আজ আপনাদের এখন কিছু কিনতে বলছি না, একটি ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা জানতে বলছি। কেন পলাশীর প্রান্তরে সেদিন ক্লাইভের হাতে সিরাজদৌল্লার পরাজয় হয়েছিল ? প্রকৃত সত্যটা কি ?
সবাই নড়েচড়ে বসল। যারা খবরের কাগজ খুলে পড়ছিলেন, তারা সেটা ভাঁজ করে পাশে রাখলেন। ভদ্রলোক আবার শুরু করলেন " শুনুন তাহলে,যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগের রাতে পলাশীর আমবাগানের দুপ্রান্তরে একদিকে সিরাজের যুদ্ধ শিবির অন্যদিকে ক্লাইভের। সিরাজের যুদ্ধ শিবিরে গুপ্তচর এসে খবর দিল - ক্লাইভের সৈন্য সংখ্যা কম কিন্তু কামানের সংখ্যা বেশী। অন্তত: গোটা বারো কামান ইতিমধ্যেই ক্লাইভ সিরাজের শিবিরের দিকে তাক করে সাজিয়ে ফেলেছে।
সেনাপতি মীরমদনের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তাঁদের তো মাত্র তিন খানা কামান তাই দিয়ে বারোখানা কামানের মোকাবিলা কি করে হবে ?সবাই চিন্তিত।
সিরাজের সেনাশিবিরে ছিল এক নাপিত, সেনাদের দাড়ি গোঁফ কামাতো, কিন্তু তার ছিল ক্ষুরধার বুদ্ধি। সে একটা বুদ্ধি দিল কি করে রাতা রাতি তিন খানা কামানকে তিন ডজন কামান বানান যায়।
তার কথা মত ৩০ - ৩২ জন সৈন্যকে বস্ত্রহীন করা হল। দেশের স্বার্থে তারা তাই হল। তারপর তাদের সারি সারি উপুড় করে দেওয়া হল পশ্চাৎদেশ তাক করা রইল ক্লাইভের শিবিরের দিকে এবং সেই সব পশ্চাৎদেশ আলকাতড়ায় কালো করা হল, সেখানে গুঁজে দেওয়া হল আলতায় রাঙানো লম্বা লম্বা মানকচুর ডগা। উপুড় করা শরীর ঢেকে দেওয়া হল কালো কাপড়ে।
দুদিকে দুটো আসল কামান , মাঝখানেও একটা আর শূন্যস্থানগুলো সারি সারি সেই মানুষ কামানে সাজিয়ে ফেলা হল।
দূর থেকে কার সাধ্য বোঝে সিরাজের শিবিরে কটা কামান তিনটে না তিন ডজন ?
হলও তাই, সিরাজের শিবিরে এত কামান দেখে ক্লাইভ হাল ছেড়ে দিল। সাদাপতাকা তুলবে কিনা চিন্তাভাবনাও শুরুও করে দিল।
কিন্তু মুষ্কিল বাঁধল অন্য জায়গায়। এতক্ষণ ধরে কচুরডগা ওই স্থানে গুঁজে রাখার ফলে সৈন্যদের চুলকুনি শুরু হয়। দেশের স্বার্থে প্রায় সবাই দাঁতমুখ খিঁচে সেটা সহ্য করে থাকে , কিন্তু দুয়েকজন পারে না, চুলকুতে শুরু করে। ব্যস, ক্লাইভের সৈন্যদের নজরে সেটা পড়ে যায়। সবকিছু ফাঁস হয়ে যায়। তারপরের ইতিহাস তো আপনাদের জানাই।
এখন প্রশ্ন হল কেন সিরাজের সৈন্য দের সেদিন চুলকুনি হয়েছিল , কারণ সিরাজের শিবিরে সেদিন এই ' বান্দর ছাপ ' চুলকুনির মলমটা ছিল না। তাহলে ভারতের ইতিহাসটাই অন্যভাবে লেখা হত। বান্দর ছাপ চুলকুনির ধন্বন্তরী মলম। মাত্র পাঁচটাকা।
যারা খবরের কাগজ গুটিয়ে রেখে ভারতের অজানা ইতিহাস শুনছিল তারা হাসতে হাসতে আবার কাগজ খুলে বসল।
দু চারটা বান্দর ছাপ বিক্রিও হল।
কোন মন্তব্য নেই