বর্তমানে কেন আর সেই মহাপুরুষরা জন্মায় না ?"
রামকৃষ্ণ মিশনের একজন মহারাজকে কিছু দিন আগে প্রশ্ন করা হয়,
"মহারাজ,
এত মহাপুরুষ কিভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ম নিতেন ?
আর বর্তমানে কেন আর সেই মহাপুরুষরা জন্মায় না ?"
অসাধারণ উত্তরে মহারাজ বলেছিলেন,
"আকাশে প্লেন ওড়ে,
সে তো আর যেখানে সেখানে ইচ্ছামত নামতে পারে না !
তার নামার জন্য উপযুক্ত এয়ারপোর্ট প্রয়োজন হয় !
ঠিক সেই রকম এক সময় ছিল যখন এই ভারতবর্ষে উপযুক্ত 'মা' ছিল।
এখন সেই এয়ারপোর্ট নেই,
তাই বড় বড় প্লেন আর নামতে চাইলেও পারছে না"।
আধুনিক মনঃ বিজ্ঞানের মতে,
সন্তান কেমন মানুষ হবে
সেটা ৮৫% নির্ভর করে মা-এর উপর।
আর তা নির্ধারণ হয়ে যায়
মায়ের গর্ভে সন্তান আসা
এবং
জন্মের ৫ বছরের মধ্যে।
মায়ের চিন্তা,
কথা,
ভালো লাগা- মন্দ লাগা,
রুচি,
আদর্শ,
সন্তানের উপর দারুনভাবে প্রভাব ফেলতে থাকে গর্ভে থাকা অবস্থাতেই।
মায়ের কষ্ট, তার কষ্ট।
মায়ের আনন্দ, তার আনন্দ।
মায়ের খাবার, তার খাবার।
তাহলে মায়ের ইচ্ছা, তার ইচ্ছা হবে না কেন !!
মায়ের আদর্শ, তার আদর্শ,
মায়ের জীবনবোধ,
সন্তানের জীবন বোধ হবে।
সেখান থেকেই তার শিক্ষা শুরু
3 Idiots এর
All is Well এর মত।
আমরা আজও
সে যুগের কৌশল্যাকে মনে রাখি,
পুত্র রামের কারণে।
এ যুগে ভুবনেশ্বরী দেবীকে চিনি কারণ,
তিনি স্বামী বিবেকানন্দের 'মা' ছিলেন।
প্রভাবতী দেবীকে চিনি,
কারণ তিনি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর 'মা' বলে।
ভগবতী দেবীকে চিনি,
কারণ তিনি বিদ্যাসাগরের 'মা' ছিলেন।
সারদা দেবীকে মনে রেখেছি,
কারণ তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গর্ভধারিণী ছিলেন।
যুগে যুগে কত মহাপ্রান এসেছেন আমাদের পথ দেখানোর জন্যে।
বারে বারে তারা আমাদের বলেছেন,
যদি জীবন সার্থক করতে চাও,
তাহলে এই পথে এসো।
আমরা তাদের কথা না শুনে,
চলি উল্টো পথে।
এখন কার সময়ে কয়জন বাবা-মা আছেন,
যারা এমন সন্তান চান ??
আমাদের কি অহঙ্কার -
আমরা আধুনিক,
আমরা বিজ্ঞান মনস্ক l
আমাদের ভদ্রতা -
সভ্যতা গাদা-গাদা বই পড়ায়,
অনেক সার্টিফিকেটে,
ভাল রোজগারে,
ফ্ল্যাট,
গাড়ি-বাড়ি,
স্যুট-বুট,
দামি শাড়ি,
গয়না,
Internet,
i-phone,
i-pad,
Tab.etc
কিন্তু.....
কত আশা নিয়ে
ছোট্ট দেব শিশুটি
অন্ধকার জগৎ থেকে এলো,
তাকে কি আমরা সত্যিকারের আলোর সন্ধান দিতে পারছি ?
সে পথ তো আমাদেরই অচেনা।
ছোট্ট নরেন (তখনও বিলে) একটা অন্যায় করল।
মা তাকে কোন কটু কথা না বলে,
কোনও শাস্তি না দিয়ে,
একটা কাগজে সেটি লিখে ঘরে টানিয়ে দিলেন।
দুরন্ত বিলের পড়ায় মন নেই,
মা পড়ছেন,
বিলে শুনছে,
সব আয়ত্ত হয়ে যাচ্ছে।
মা শিক্ষা দিচ্ছেন,
"বাবা, জীবনে যেটা সত্য বলে জানবে, কখনও সেই আদর্শ থেকে সরে এস না।"
তাই তো পরবর্তীতে আমরা পেলাম
"সত্যের জন্যে সব কিছু ত্যাগ করা যায়,
কিন্তু কোনও কিছুর জন্য সত্যকে ত্যাগ করা যায় না।"
"ছোট বেলায় মায়ের কাছেই জীবনে বড় হওয়ার সব শিক্ষা পেয়েছি,
তাই বলতে পারি- সত্যই আমার ঈশ্বর,
সমগ্র জগৎ আমার দেশ,
জগৎ এর সবাই আমার ভাই,
আমার রক্ত।"
এই হল যথার্থ 'মা' এর শিক্ষা।
১৪ - ১৫ বছরের সুভাষ বসু
'মা' কে চিঠি লিখছেন-
"তোমরা আমার কাছে কি চাও মা ?
তোমরা কি চাও আমি লেখাপড়া শিখে ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার হই।
আমার অনেক টাকা,
বাড়ি-গাড়ি হোক।
চাইতেই শনি, রবির ছুটি। সব মিলিয়ে পুজো পাক্কা ছ’দিনের।
নাকি এই চাও- আমি পৃথিবীর সবথেকে গরীব হব।
কিন্তু এমন মানুষ হব,
যেন শ্রদ্ধায় পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ মাথা নিচু করে।"
ক'জন বাবা-মা আছি আমরা,
সৎ সাহস নিয়ে আমাদের সন্তানদের এই উৎসাহ দিতে পারি!
বলি শুধু পড়,
ভালো রেজাল্ট করো,
টাকা রোজগার করার একটা মেশিন হয়ে ওঠো।
আমরা শেখাই,
কি করে সে মিথ্যাবাদী হতে পারে,
কি করে সে আরও স্বার্থপর হতে পারে।
ছোট শিশুর কোমল অন্তরে এই 'বিষ-বৃক্ষ' আমরাই লাগিয়ে দিই।
আর সত্যিই এক সময় যখন সে আবেগহীন,
ভালবাসা হীন,
বিবেকহীন মেশিনের মত আচরণ করে,
তখন আমরা বুক চাপড়াই।
আমরা প্রত্যেকেই দ্রুত গতির এক ব্রেকহীন গাড়িতে উঠেছি,
যার গতি শুধু বাড়তে পারে কমে না।
আমরা ভেসে চলেছি......
সন্তানদেরও তুলে দিচ্ছি
ব্রেক ফেল করা আর এক গাড়িতে।
এই গাড়ি কখন থামবে.....???
যখন সব শেষ !!!"
এই লেখাটা পড়ে এত মন ছুঁয়ে গেল যে Share না করে পারলাম না.....
কোন মন্তব্য নেই