Breaking News

ওরা পেটের দায়ে বাড়ী বাড়ী যায়, বিনা পরিশ্রমে উপার্জন হয়না ওদের

দুপুর তখন আড়াইটা ... রোজ এই ছেলেটা আমাদের বাড়ী দুধ দিয়ে যায়, ওর ঘামে ভেজা মুখটা দেখলে ভারী মায়া লাগে আমার। আমাদের দেশে ওর মত কত পুরুষ আছে যারা দুটো পয়সার জন্য রোদ জল ঝড় উপেক্ষা করে রোজ কাজে বেড়িয়ে যায়। তবুও মুখে থাকে অমলীন হাসি ।

Image may contain: one or more people, people standing, people walking, shoes and outdoor

গ্রামের সবাই ওকে নাড়া বলেই ডাকে, ভালো নাম অবশ্যই একটা কিছু আছে কিন্তু সেটা চাপা পড়ে গেছে দারিদ্রতার চাপে । আসলে গরীবের ছেলেদের নাম পদবী পোশাক পরিচ্ছদ এসবে অতটা বিলাসীতা থাকেনা । মা বাবা তাদের সন্তানদের ধুলো বালি ,কাদা ,কুঁড়ো, ছাই, কাঁকড় এসব নামেই মানুষ করে,(এগুলো সব আমাদের গ্রামে মানুষের নাম, বিশ্বাস না হলে একদিন এসে দেখে যান) এই নাড়ার মত আমাদের গ্রামে অনেক ছেলেপিলে আছে যাদের নাম শুনলেও হাসি পাবে, কিন্তু এসবে এদের কিছু যায় আসেনা , সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিকেলে স্নান সারার পর একটু সেজেগুজে পাড়াতে দু পা হাঁটলেই ওরা দীঘা পুরী ভ্রমনের আনন্দ উপভোগ করে নেয়।



নাড়াকে যখন দুধের বালতি হাতে "ঐশিক" বলে ডাকতে শুনি তখন‌ই খুব কষ্ট হয়, যে মাসের শেষে আমি টাকা দিচ্ছি বলে ওকে রোজ নিয়ম করে আমাদের বাড়ী দুধ দিয়ে যেতে হয়, সে যত‌ই রোদ আর গরম হোক না কেন!! আমার যখন খুব মায়া লাগে তখন কাঁচের বয়াম থেকে একটু আচার বাটি করে এনে ওকে দি। একটু জল‌ও দি , কখনো কলাই ভাজা কখনো ভাত খেতেও বলি , আচার পেয়ে ওর খুব আনন্দ হয়, কিন্তু ভাত কোনোদিন খায়নি নাড়াদা । আমি জানি ওর বাড়ীতেও অভাব নেই , কিন্তু বাড়ী থেকে বেড়িয়ে তো সারাদিন আর বাড়ীমুখো হ‌ওয়া হয়না তাই খাওয়ার জোটে অনেক দেরীতে । আর যেহেতু আমাদের জন্য এতটা রাস্তা তেতেপুড়ে এসেছে তাই এই অফার করাটা আমার কর্তব্য । নাড়াদা এমনিতেও খুব ভালো, কখনো খেঁকিয়ে কথা বলেনা , খুব নরম স্বভাবের আর সরল প্রকৃতির । তাই ওকে দেখে সারা পৃথিবী জুড়ে যত এরকম মানুষ আছে তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে যায় ।




শহরেও এমন অনেক ডেলিভারী বয় কাজ করে, ওদের‌ও পরিশ্রম হয়, ওদের‌ও জল তেষ্টা পায়, দরজার বাইরে থেকেই ওদের মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করুন ওরা জল খাবে কিনা ?? বলা তো যায়না হয়ত আপনার বাড়ীর জলে ওর শুকিয়ে যাওয়া জীভটা একটু নরম হবে ।

Image may contain: one or more people, people standing, people walking, shoes and outdoor

ছবিটা পিছন থেকেই তুলেছি , নাড়া দা জানেও না আজ ওর কথা লিখলাম বসে বসে। অনেক দিন ধরেই ভেবেছি লিখবো তাই আজ লিখেই ফেললাম ।। আপনাদের বাড়ীতে আসা ঐ ছেলেটিও তো নাড়া দার মতই , একটু ভালো ব্যবহার ওদের প্রাপ্য , ওরা পেটের দায়ে বাড়ী বাড়ী যায়, বিনা পরিশ্রমে উপার্জন হয়না ওদের ।।

✍️ পদ্মাবতী মন্ডল

ছবি -আমাদের নাড়া দা ।

কোন মন্তব্য নেই