মানসী মন্ডলের "আতিথেয়তা"
আতিথেয়তা
***********
প্রতিদিনের মতো আজও স্কুল ছুটির শেষে বরের বাইকের পিছনে লক্ষ্মী মেয়ের মতো বসলাম। চলন্ত বাইকে বরাবরই খুব অন্যমনস্ক হয়ে যাই। কিছুটা এসে একটি গ্রামে ঢোকার মুখে আচমকা বাইক দাঁড়িয়ে গেল।গোরুর গাড়ীকে সাইড দিতে মাঝে মাঝে এমন দাঁড়াতে হয়। হেলমেটের কাঁচ তুলে দেখতেই কিছুটা অবাক হলাম..... কোথায় গাড়ী! সামনে এক মাঝবয়স্কা ভদ্র মহিলা স্মিত বদনে দাঁড়িয়ে। ভাবলাম বাইক ধাক্কা মারল নাকি! অন্যমনস্কতায় একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম, চশমটা খুলে দেখতে গিয়ে বিস্ময়ের আর অন্ত রইল না। কী হল ব্যাপারটা! ভদ্র মহিলা বরের হাত ধরে খুব টানাটানি করছে। মহা মুশকিল ও আবার কী করল! এমনিতেই বরাবর বর আমার লাজুক,মিতভাষী। কিন্তু কেস টা কী হল? চমক ভাঙল ভদ্রমহিলার কন্ঠস্বরে " বাবু একবার আয় বাড়ীতে, শুধু একটি বার।কোন কথা শুনব না। তোকে আসতেই হবে।" কিছুটা অবাক আর ভয়ের সাথে জানতে চাইলাম " কী কারণ? আপনি কী আমাদের চেনেন? " মধ্যবয়সী মহিলা দাঁতবের করে জোরে হেসে বললল " কেন রে বুড়ি বাড়ীতে আসার জন্য কী চেনা পরিচিতি লাগে?" বেশ জোর করে আমাদের দুজনকে হাতধরে টেনে বাইক থেকে নামালল। তারপর নিজে আগে বাড়ীর ভিতরে চলে গেল। আমি মন থেকে ব্যাপারটা ঠিক মেনে নিতে পারছিলাম না। দিনকাল তো ভাল না। কার মনে কী আছে কে বলতে পারে! পতিদেব চোখের ইশারায় জানতে চাইল আমার কোন পরিচিতা কিনা।বন্ধু বা বান্ধবীর মা টা কেউ! আমি ঠোঁট উল্টে বুঝিয়ে দিলাম কিচ্ছু বুঝতে পারছি না, চিনতেও পারছি না। এই গ্রামের অনেক ছেলে মেয়ে আছে যারা আমার সাথে একসাথে পড়াশুনা করেছে। সেই সূত্রে অনেকের মা,বাবা বাড়ীতে ডাকে মাঝে মাঝে,স্কুল যাওয়া আসার পথে দেখা হলে। যাইহোক আর ভাবনা চিন্তা না করে দুজনে গুটি গুটি পায়ে বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করলাম।
বাড়ীতে ঢুকে আর এক বিস্ময়। দেখি আমাদের জন্য আগে থেকেই সযত্নে বসবার চেয়ার পেতে রাখা হয়েছে। মাটীর ছোট্ট বাড়ী। কিন্তু উঠোনখানা বেশ বড় খোলা মেলা এবং গোবরমাটি দিয়ে সুন্দর করে নিকানো। বাড়ীটা এককথায় খুব পরিষ্কার পরিছন্ন। আমরা নির্দিষ্ট আসনে বসার সাথে সাথে মহিলা খুব ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। তাড়াতাড়ি ঠান্ডা জল খেতে দিয়ে চায়ের ব্যবস্থা করতে গেলেন। তার মাঝে কিন্তু অনর্গল হেসে কথা বলে চলেছেন। নাতীকে দিয়ে মিষ্টি আনতে পাঠিয়ে ছিলেন, সে ফিরতে লেট করায় আরও বেশী ঘরবাড়ী করতে লাগলেন। আমার বর বেশ খোশমেজাজে ওনার সাথে কথা বলেছেন আর আমি শুধু অবাক চোখে দেখছি আর শুনছি। কেমন যেন একটা ঘোর লেগে গেছে আমার। এ কোথায় এসে পড়লাম রে বাবা!
" বুড়ি চা খাবি তো?"... মহিলার কন্ঠে আবেশ থেকে জাগলাম।
" না না আমি চা টা খাব না। আমার এখন ভাতের খিদে, বাড়ী গিয়ে ভাত খাব। আপনি ব্যস্ত হবেন না। "ছুটির পর বাড়ী এসে আমি ভাত খাই নিয়মিত।
কে শোনে কার কথা! অভিমানের সুরে বলতে লাগলেন "বাবু আমার খুব ভাল। বুড়ি আমাকে আপন মনে করছে না। "
স্বাভাবিক, উনি আমার মুখ দেখে বুঝে গেছেন মনে আমার খটকা আছে। মাটীর উনুনে খড়ের আগুন জ্বালিয়ে ছোট একটি হাঁড়িতে করে চায়ের জল বসিয়ে দিলেন। এই প্রথম আমি ওনার হাত ধরে বললাম
" মা রোদের মধ্যে বসে উনুনে আগুনের তাপে তোমাকে চা করতে হবে না।"
উনি খুব রেগে বললেন " তুই গিয়ে একটু বস তো। তুই যত বড়ই ম্যাডাম হোস না কেন আমি তোকে তুই করেই বলব।"
ইতিমধ্যে নাতী এল মিষ্টি নিয়ে। খালি পেটে মিষ্টি খাব না বলে আমি ফিরিয়ে দিলাম। বর একটি খেল। চা নিয়ে এলে চা ও আমি ফিরিয়ে দিলাম। বর কিন্তু চা খেল। আমি শুধু চারিদিক চেয়ে দেখতে লাগলাম।
মহিলা উঠোনে পা ছড়িয়ে বসে কখনও হেসে কখনও কেঁদে তার জীবনের উত্থান পতনের কথা বলতে লাগলেন। মহিলা ভায়ের কাছে থাকেন। একমাত্র ছেলে বাইরে কাজ করে। ওখানে বউ ছেলেরাও থাকে। ছেলে বউকে আর নাতীদের নিয়ে যদিও মাঝে মাঝে মায়ের কাছে আসে। ছেলেকে নিয়ে ওনার বেশ গর্ব। স্বামীর কথা জানতে চাওয়ায় কপাল চাপড়ে হতাশ সুরে বললেন " সে সতীন নিয়ে থাকে"। ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে ১৯ বছরে গর্ভবতী অবস্থায় বাপের বাড়ী ফেরত আসেন। এদিকে ভায়ের স্ত্রীও থাকে না। ছেলে নিয়ে বাবার বাড়ী চলে গেছে। আর কখনও আসবে না বলেছে। দু'ভাই বোনের সংসারে কোন রকমে দুটো আনে দুটো খায়।
" আজ প্রথম তোর মুখ দেখলাম জানিস বুড়ি।"
মুচকি হেসে বললাম "কেন?"
যদিও কারণটা আমার জানা। আমি মুখে রুমাল বাঁধি ডাস্ট এলার্জির জন্য তারউপর সানগ্লাস পড়ি,তারপর মাথায় চাপায় হেলমেট। স্বাভাবিক কারণেই উনি আমার মুখ কখনও দেখেন নি। আজ সাথে আমার মেয়ে কেন আসেনি জানতে চাইল। মেয়ে আমার স্কুলেই পড়ে,তাই আমার সাথেই যায়। আজ বোনের মেয়ে আসায় ওর আর স্কুলে যেতে মন চাইল না, আমিও আর জোর করিনি। কেমন করুণ সুরে বলল " জানিস বুড়ি তোরা তিনজনে যখন স্কুলে যাস আমি প্রতিদিন দাঁড়িয়ে দেখি। তোদের যেতে দেখে আমার খুব ভাল লাগে।"
শ্বশুড় বাড়ীতে খেতে দিত না আর কত খিদে নিয়ে থাকতে হত সে কথা বলতে গিয়ে অঝরে কেঁদে ফেললেন। আমারও ভিতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল।আজ ২০ বছর পর বেটার বউ খোরপোষের মামলা করে মহিলার স্বামীকে জেল খাটিয়ে ছেড়েছে। ২৫ হাজার টাকা খোরপোষ দিতে চাইলে ওরা নেয়নি। আমার কাছে জানতে চাইল " বুড়ি টাকাটা কী নেব বল? আমি গরীব মানুষ দিন আনি দিন খায় যা দেয় তাতেই লাভ। বহু রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে,যা খায় বমি হয়। বহু ডাক্তার দেখিয়েও সারছে না।"
আমি বললাম" নিয়ে নিন এই বয়সে আপনার কাজে লাগবে। " বরকে খোঁচা মেরে আমি উঠে পড়লাম। তখন আমার ভাত খিদে পেয়েছে খুব।
বাইরে বাইকে চাপাতে এসে হাতটা ধরে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে বলল--
" বাবু,বুড়ি তোরা একদিন দুপুরে আমার বাড়ীতে খাবি কেমন।"
উনি পুজো দেবেন তাতে আমাদের আগাম নিমন্ত্রন দিয়ে রাখলেন। আমিও আমার বাড়ী আসতে বললাম। তাতে উনি বললেন
" তুই যেদিন সাথে করে নিয়ে যাবি সেদিন যাব।"
কিছুটা আন্দাজ করতে পারলাম প্রেম ভালবাসা হীন এতবড় জীবনে উনি মানসিক ভাবে বিদ্ধস্ত হয়েছন।বাইক স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে এলে আমি পিছনে তাকিয়ে হাত নাড়লাম।দেখি তখনও উনি অমিলন হাসিটি নিয়ে হাত নাড়ছেন। গ্রামে বাসন্তী পুজোর অনুষ্ঠান চলছে লোকে লোকারণ্য, কোন রকমে ভিড় কাটিয়ে ফাঁকা রাস্তায় এসে বরকে বললাম
"কী বুঝলে?"
মাথা নাড়িয়ে জানাল কিছুই না। আমি হেলমেটের ভিতর মাথা গলিয়ে অযাচিত আতিথেয়তার কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ী ফিরলাম।
**** মানসী মন্ডল****
➥ আপনার লেখা কবিতা, গল্প ও আপনার এলাকার যে কোনো রকম খবর প্রকাশের জন্য whatsapp এ যোগাযোগ করুন 8769038178 নাম্বারে➥
NEWS.24X7 এর নিউজ আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ Like করুন।
***********
প্রতিদিনের মতো আজও স্কুল ছুটির শেষে বরের বাইকের পিছনে লক্ষ্মী মেয়ের মতো বসলাম। চলন্ত বাইকে বরাবরই খুব অন্যমনস্ক হয়ে যাই। কিছুটা এসে একটি গ্রামে ঢোকার মুখে আচমকা বাইক দাঁড়িয়ে গেল।গোরুর গাড়ীকে সাইড দিতে মাঝে মাঝে এমন দাঁড়াতে হয়। হেলমেটের কাঁচ তুলে দেখতেই কিছুটা অবাক হলাম..... কোথায় গাড়ী! সামনে এক মাঝবয়স্কা ভদ্র মহিলা স্মিত বদনে দাঁড়িয়ে। ভাবলাম বাইক ধাক্কা মারল নাকি! অন্যমনস্কতায় একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম, চশমটা খুলে দেখতে গিয়ে বিস্ময়ের আর অন্ত রইল না। কী হল ব্যাপারটা! ভদ্র মহিলা বরের হাত ধরে খুব টানাটানি করছে। মহা মুশকিল ও আবার কী করল! এমনিতেই বরাবর বর আমার লাজুক,মিতভাষী। কিন্তু কেস টা কী হল? চমক ভাঙল ভদ্রমহিলার কন্ঠস্বরে " বাবু একবার আয় বাড়ীতে, শুধু একটি বার।কোন কথা শুনব না। তোকে আসতেই হবে।" কিছুটা অবাক আর ভয়ের সাথে জানতে চাইলাম " কী কারণ? আপনি কী আমাদের চেনেন? " মধ্যবয়সী মহিলা দাঁতবের করে জোরে হেসে বললল " কেন রে বুড়ি বাড়ীতে আসার জন্য কী চেনা পরিচিতি লাগে?" বেশ জোর করে আমাদের দুজনকে হাতধরে টেনে বাইক থেকে নামালল। তারপর নিজে আগে বাড়ীর ভিতরে চলে গেল। আমি মন থেকে ব্যাপারটা ঠিক মেনে নিতে পারছিলাম না। দিনকাল তো ভাল না। কার মনে কী আছে কে বলতে পারে! পতিদেব চোখের ইশারায় জানতে চাইল আমার কোন পরিচিতা কিনা।বন্ধু বা বান্ধবীর মা টা কেউ! আমি ঠোঁট উল্টে বুঝিয়ে দিলাম কিচ্ছু বুঝতে পারছি না, চিনতেও পারছি না। এই গ্রামের অনেক ছেলে মেয়ে আছে যারা আমার সাথে একসাথে পড়াশুনা করেছে। সেই সূত্রে অনেকের মা,বাবা বাড়ীতে ডাকে মাঝে মাঝে,স্কুল যাওয়া আসার পথে দেখা হলে। যাইহোক আর ভাবনা চিন্তা না করে দুজনে গুটি গুটি পায়ে বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করলাম।
বাড়ীতে ঢুকে আর এক বিস্ময়। দেখি আমাদের জন্য আগে থেকেই সযত্নে বসবার চেয়ার পেতে রাখা হয়েছে। মাটীর ছোট্ট বাড়ী। কিন্তু উঠোনখানা বেশ বড় খোলা মেলা এবং গোবরমাটি দিয়ে সুন্দর করে নিকানো। বাড়ীটা এককথায় খুব পরিষ্কার পরিছন্ন। আমরা নির্দিষ্ট আসনে বসার সাথে সাথে মহিলা খুব ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। তাড়াতাড়ি ঠান্ডা জল খেতে দিয়ে চায়ের ব্যবস্থা করতে গেলেন। তার মাঝে কিন্তু অনর্গল হেসে কথা বলে চলেছেন। নাতীকে দিয়ে মিষ্টি আনতে পাঠিয়ে ছিলেন, সে ফিরতে লেট করায় আরও বেশী ঘরবাড়ী করতে লাগলেন। আমার বর বেশ খোশমেজাজে ওনার সাথে কথা বলেছেন আর আমি শুধু অবাক চোখে দেখছি আর শুনছি। কেমন যেন একটা ঘোর লেগে গেছে আমার। এ কোথায় এসে পড়লাম রে বাবা!
" বুড়ি চা খাবি তো?"... মহিলার কন্ঠে আবেশ থেকে জাগলাম।
" না না আমি চা টা খাব না। আমার এখন ভাতের খিদে, বাড়ী গিয়ে ভাত খাব। আপনি ব্যস্ত হবেন না। "ছুটির পর বাড়ী এসে আমি ভাত খাই নিয়মিত।
কে শোনে কার কথা! অভিমানের সুরে বলতে লাগলেন "বাবু আমার খুব ভাল। বুড়ি আমাকে আপন মনে করছে না। "
স্বাভাবিক, উনি আমার মুখ দেখে বুঝে গেছেন মনে আমার খটকা আছে। মাটীর উনুনে খড়ের আগুন জ্বালিয়ে ছোট একটি হাঁড়িতে করে চায়ের জল বসিয়ে দিলেন। এই প্রথম আমি ওনার হাত ধরে বললাম
" মা রোদের মধ্যে বসে উনুনে আগুনের তাপে তোমাকে চা করতে হবে না।"
উনি খুব রেগে বললেন " তুই গিয়ে একটু বস তো। তুই যত বড়ই ম্যাডাম হোস না কেন আমি তোকে তুই করেই বলব।"
ইতিমধ্যে নাতী এল মিষ্টি নিয়ে। খালি পেটে মিষ্টি খাব না বলে আমি ফিরিয়ে দিলাম। বর একটি খেল। চা নিয়ে এলে চা ও আমি ফিরিয়ে দিলাম। বর কিন্তু চা খেল। আমি শুধু চারিদিক চেয়ে দেখতে লাগলাম।
মহিলা উঠোনে পা ছড়িয়ে বসে কখনও হেসে কখনও কেঁদে তার জীবনের উত্থান পতনের কথা বলতে লাগলেন। মহিলা ভায়ের কাছে থাকেন। একমাত্র ছেলে বাইরে কাজ করে। ওখানে বউ ছেলেরাও থাকে। ছেলে বউকে আর নাতীদের নিয়ে যদিও মাঝে মাঝে মায়ের কাছে আসে। ছেলেকে নিয়ে ওনার বেশ গর্ব। স্বামীর কথা জানতে চাওয়ায় কপাল চাপড়ে হতাশ সুরে বললেন " সে সতীন নিয়ে থাকে"। ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে ১৯ বছরে গর্ভবতী অবস্থায় বাপের বাড়ী ফেরত আসেন। এদিকে ভায়ের স্ত্রীও থাকে না। ছেলে নিয়ে বাবার বাড়ী চলে গেছে। আর কখনও আসবে না বলেছে। দু'ভাই বোনের সংসারে কোন রকমে দুটো আনে দুটো খায়।
" আজ প্রথম তোর মুখ দেখলাম জানিস বুড়ি।"
মুচকি হেসে বললাম "কেন?"
যদিও কারণটা আমার জানা। আমি মুখে রুমাল বাঁধি ডাস্ট এলার্জির জন্য তারউপর সানগ্লাস পড়ি,তারপর মাথায় চাপায় হেলমেট। স্বাভাবিক কারণেই উনি আমার মুখ কখনও দেখেন নি। আজ সাথে আমার মেয়ে কেন আসেনি জানতে চাইল। মেয়ে আমার স্কুলেই পড়ে,তাই আমার সাথেই যায়। আজ বোনের মেয়ে আসায় ওর আর স্কুলে যেতে মন চাইল না, আমিও আর জোর করিনি। কেমন করুণ সুরে বলল " জানিস বুড়ি তোরা তিনজনে যখন স্কুলে যাস আমি প্রতিদিন দাঁড়িয়ে দেখি। তোদের যেতে দেখে আমার খুব ভাল লাগে।"
শ্বশুড় বাড়ীতে খেতে দিত না আর কত খিদে নিয়ে থাকতে হত সে কথা বলতে গিয়ে অঝরে কেঁদে ফেললেন। আমারও ভিতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল।আজ ২০ বছর পর বেটার বউ খোরপোষের মামলা করে মহিলার স্বামীকে জেল খাটিয়ে ছেড়েছে। ২৫ হাজার টাকা খোরপোষ দিতে চাইলে ওরা নেয়নি। আমার কাছে জানতে চাইল " বুড়ি টাকাটা কী নেব বল? আমি গরীব মানুষ দিন আনি দিন খায় যা দেয় তাতেই লাভ। বহু রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে,যা খায় বমি হয়। বহু ডাক্তার দেখিয়েও সারছে না।"
আমি বললাম" নিয়ে নিন এই বয়সে আপনার কাজে লাগবে। " বরকে খোঁচা মেরে আমি উঠে পড়লাম। তখন আমার ভাত খিদে পেয়েছে খুব।
বাইরে বাইকে চাপাতে এসে হাতটা ধরে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে বলল--
" বাবু,বুড়ি তোরা একদিন দুপুরে আমার বাড়ীতে খাবি কেমন।"
উনি পুজো দেবেন তাতে আমাদের আগাম নিমন্ত্রন দিয়ে রাখলেন। আমিও আমার বাড়ী আসতে বললাম। তাতে উনি বললেন
" তুই যেদিন সাথে করে নিয়ে যাবি সেদিন যাব।"
কিছুটা আন্দাজ করতে পারলাম প্রেম ভালবাসা হীন এতবড় জীবনে উনি মানসিক ভাবে বিদ্ধস্ত হয়েছন।বাইক স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে এলে আমি পিছনে তাকিয়ে হাত নাড়লাম।দেখি তখনও উনি অমিলন হাসিটি নিয়ে হাত নাড়ছেন। গ্রামে বাসন্তী পুজোর অনুষ্ঠান চলছে লোকে লোকারণ্য, কোন রকমে ভিড় কাটিয়ে ফাঁকা রাস্তায় এসে বরকে বললাম
"কী বুঝলে?"
মাথা নাড়িয়ে জানাল কিছুই না। আমি হেলমেটের ভিতর মাথা গলিয়ে অযাচিত আতিথেয়তার কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ী ফিরলাম।
**** মানসী মন্ডল****
➥ আপনার লেখা কবিতা, গল্প ও আপনার এলাকার যে কোনো রকম খবর প্রকাশের জন্য whatsapp এ যোগাযোগ করুন 8769038178 নাম্বারে➥
NEWS.24X7 এর নিউজ আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ Like করুন।
কোন মন্তব্য নেই